শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: সরকারের শেষ বছরে আকার বাড়ল মন্ত্রিসভার। বর্তমান মন্ত্রিসভায় নতুন করে যুক্ত হলেন তিনজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্য একজন প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হলেন। পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার ও ল²ীপুরের এমপি এ কে এম শাহজাহান কামাল। আর রাজবাড়ীর এমপি কাজী কেরামত আলী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। শপথ নেওয়া পর পর তিন মন্ত্রী-এক প্রতিমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে তথ্য-প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে এ কে এম শাহজাহান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কেরামত আলী দায়িত্ব দেওয়া হতে হবে তা রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। তবে দপ্তর বন্টণ হবে আজ তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে এই চারজনকে শপথ পাঠ করান প্রেসিডেন্টে মো. আবদুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু. বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং নতুন মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে ছিলেন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম তাঁদের ফোন করে শপথ নিতে বঙ্গভবনে যাওয়ার আহ্বান জানান।
বিজয় বাংলা কিবোর্ডের উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার (৬৮) যেহেতু সংসদ সদস্য নন, তাকে মন্ত্রিসভায় ঢুকলেন টেকনোক্র্যাট হিসেবে। আর বাকিরা কে কোন দায়িত্ব পাচ্ছেন, তা পরে স্পষ্ট হবে। মন্ত্রিসভার নতুন এই সদস্যদের বঙ্গভবনে নিয়ে যেতে বিকালে সচিবালয় থেকে পাঠানো হয় চারটি গাড়ি। শপথের জন্য বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে তারা সবাই বঙ্গভবনে পৌঁছে যান।
শপথ পড়াতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে দরবার হলে উপস্থিত হন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে তিন মন্ত্রীর শপথ পড়ান প্রেসিডেন্ট। পরে হয় প্রতিমন্ত্রীর শপথ। শপথ নেওয়ার পর তিন মন্ত্রী টেবিলে বসে শপথবাক্যে স্বাক্ষর করবেন। প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়ে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এই চারজনকে নিয়ে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল ৫৪। তাদের মধ্যে ৩৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী। এছাড়া মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন আরও পাঁচজন।
নারায়ন চন্দ্র চন্দ নারায়ন চন্দ্র চন্দ মোস্তাফা জব্বার মোস্তাফা জব্বার শাহজাহান কামাল শাহজাহান কামাল কাজী কেরামত আলী কাজী কেরামত আলী।৭২ বছর বয়সী নারায়ন চন্দ্র চন্দ খুলনা-৫ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনবার। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করলে তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। নতুন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পরিচিত উদ্যোক্তা। আনন্দ প্রিন্টার্স এবং আনন্দ মুদ্রায়ণের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ৬৮ বছর বয়সী জব্বার ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন। পরের বছর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার যুক্ত করে নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভার আরেক নতুন মুখ শাহজাহান কামাল ল²ীপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি।৭২ বছর বয়সী এই রাজনীতিক ল²ীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপাতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। তার ভাই অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি। ৬৩ বছর বয়সী কাজী কেরামত আলী গত নির্বাচনে রাজবাড়ী-১ আসন থেকে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য এবং সরকারি প্রতিশ্রæতি সম্পর্কিত কমিটি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
২০১৪ সালের পরে মন্ত্রিসভায় যত রদবদল
গত দুই বছরে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন শোনা গেলেও তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাপক কোনো পরিবর্তন আনেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করে এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। যার মধ্যে ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুইজন উপমন্ত্রী। এর দেড় মাসের মাথায় এ এইচ মাহমুদ আলী মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু পান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। আর হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য অক্টোবরে মন্ত্রিত্ব হারান লতিফ সিদ্দিকী। ২০১৫ সালের ৯ জুলাই আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দেওয়া হয় স্থানীয় সরকারের দায়িত। পরের সপ্তাহে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসিকে মন্ত্রী এবং তারানা হালিম ও নুরুজ্জামান আহমেদকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ওই দিন মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পান আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং ইয়াফেস ওসমান। এর দুই দিন পর ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই সৈয়দ আশরাফকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ২০১৬ সালের ১১ মে। এরপর ২০১৬ সালের ১৯ জুন খাদ্য থেকে প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে দেয়া হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। গত বছরের শেষ দিকে ১৬ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যু হয়।